হাকালুকি হাওড় মূলত মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। ভারতের আসাম সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি জলাভূমি হল হাকালুকি হাওড়। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ জলাভূমি। পরিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষিত এই হাওড়ের আশেপাশে প্রায় ১,৯০,০০০ মানুষ বসবাস করেন। জলাভুমির যথাযথ ব্যবহার এবং সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বের কারনে এই জলাভূমিটির সুরক্ষার ওপর আন্তর্জাতিকভাবে মনোনিবেশ করা হয়েছে। ১৮১.১৫ কিলোমিটার আয়তনের এই জলাভূমিটির প্রায় ৭২.৪৬ কিলোমিটার অর্থাৎ ৪০.০১% ভাগ বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত।
মৌলভীবাজার সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হাওড়ে আসার জন্য আপনাকে প্রথমে মৌলভীবাজার জেলায় পৌছাতে হবে। মৌলভীবাজার থেকে বাসযোগে এখানে পৌছাতে পারেন।
হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর। মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে হাকালুকি হাওড় অবস্থিত। পূর্বে পাথারিয়া পাহাড় এবং পশ্চিমে ভাটেরা পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল নিম্নাঞ্চল জুড়ে হাকালুকি হাওড় অবস্থিত। এটি এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। এর আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর, তন্মধ্যে শুধুমাত্র বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা (৪০%), কুলাউড়া (৩০%), এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জে (১৫%), গোলাপগঞ্জ (১০%) এবং বিয়ানীবাজার (৫%) জুড়ে বিস্তৃত। ভূতাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান, উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশ। ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে উজানে প্রচুর পাহাড় থাকায় হাকালুকি হাওরে প্রায় প্রতি বছরই আকষ্মিক বন্যা হয়। এই হাওরে ৮০-৯০টি ছোট, বড় ও মাঝারি বিল রয়েছে। শীতকালে এসব বিলকে ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে গোটা এলাকা এ বিশাল জলরাশির মূল প্রবাহ হলো দুটো প্রধান নদী জুড়ি ও ফানাই, বর্ষাকালে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে হাওড় সংলগ্ন সমগ্র এলাকা প্লাবিত হয়ে সাগরের রূপ ধারণ করে। হাওড়ের স্থায়ী জলাশয়গুলোর পানিতে নিমজ্জিত, ভাসমান, জলজ, তৃণ এবং দূর্বাঘাস এবং নল খাগড়া জাতীয় উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। শীতকালে মৎস্য আহরণ এবং অতিথি পাখিদের আগমন পর্যটকদের নয়ন মন সার্থক করে তোলে। হাকালুকি হাওরে ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪১৭ প্রজাতির পাখি, এর মধ্যে ১১২ প্রজাতির অতিথি পাখি ও ৩০৫ প্রজাতির দেশীয় পাখি। এছাড়া ১৪১ প্রজাতির অনান্য বন্যপ্রাণী, ১০৭ প্রজাতির মাছ, তন্মধ্যে ৩২ প্রজাতি বিভিন্ন পর্যায়ে বিপন্নপ্রায়। এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের কীট-পতঙ্গ, জলজ ও স্থলজ ক্ষুদ্র অনুজীব। হাকালুকি হাওরকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা বিবেচনা করা হয়। এই জলাভূমির সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব এবং টেকসই ব্যবহারের জন্য রামসার এলাকা হিসেবে এটি সংরক্ষিত ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস