১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের এক শুভ দিনে তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের আসাম প্রদেশের সিলেট জেলার মৌলভীবাজার মহকুমা শহরে শান্তিবাগ এলাকায় একটি বালিকা বিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। মনু নদীর বাম তীরে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে স্কুলটি হাঁটি-হাঁটি পা পা করে যাত্রা শুরু করলেও অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে কালের পরিক্রমায় ইহা আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে দৃপ্ত পদভারে সম্মুখে এগিয়ে চলছে। স্কুলটি মৌলভীবাজার জেলায় মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে। স্কুলের আছে দুটি ক্যাম্পাস। একটি পুরাতন ক্যাম্পাস এবং অপরটি নতুন ক্যাম্পাস। পুরাতন ক্যাম্পাসের ভূমির পরিমাণ ০.৮৪ একর এবং নতুন ক্যাম্পাসের ভূমির পরিমাণ ১.২৩ একর। বিদ্যালয়ের মোট ভূমির পরিমাণ ২.০৭ একর বা ২০৭ শতক। ইহা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ, ঢাকা এর আওতাভুক্ত একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে আছে তিনটি দ্বিতল একাডেমিক ভবন এবং একটি প্রশাসনিক ভবন। শ্রেণি কার্যক্রমের জন্য বিদ্যালয়ে আছে ২৩টি শ্রেণিকক্ষ। তাছাড়া বিদ্যালয়ে আছে দুটি বিজ্ঞান গবেষণাগার, একটি কম্পিউটার ল্যাব, একটি লাইব্রেরি, দুটি শিক্ষক মিলনায়তন, একটি সভাকক্ষ এবং একটি নামাজের কক্ষ। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৪টি কম্পিউটার আছে। উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবটি স্থাপন করেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীভুক্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। এটি পরিচালনার জন্য একজন সহকারী প্রোগ্রামার নিযুক্ত আছেন। বিদ্যালয়ের পুরাতন ক্যাম্পাসে দুটি জরাজীর্ণ একাডেমিক ভবন রয়েছে। স্কুলে বর্তমানে প্রায় এগারো শত জন ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। স্কুলটিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। অষ্টম শ্রেণির পড়াশুনা শেষে ছাত্রীরা সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। নবম ও দশম শ্রেণির পড়াশুনা শেষে ছাত্রীরা একই বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪৭ জন সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক কর্মরত আছেন। নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীরা বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ নিয়ে লেখাপড়া করে।
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে মৌলভীবাজার শহর ও শহরতলির কয়েকজন বিদ্যানুরাগী ব্যক্তির উদ্যোগে স্কুলটি স্থাপিত হয় কুলাউড়া উপজেলার লংলা পরগনার বিশিষ্ট জমিদার মৌলভী আলী আমজাদ খানের উত্তরসূরীদের দানকৃত ৮৪ শতক ভূমির উপর। সূচনা লগ্নে এটির নামকরণ করা হয় আলী আমজাদ জুবিলী গার্লস হাই স্কুল। স্কুলটি আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হলেও ছাত্রীদের প্রবেশিকা পরীক্ষা হতো বাংলা প্রদেশের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে ছাত্রীরা ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দিতো ইস্ট বেঙ্গল এডুকেশন বোর্ড, ঢাকা এর অধীনে। ১৯৬৪ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত স্কুলটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা এর অধীভুক্ত ছিল। ২০০১ সাল থেকে এ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, সিলেট এর অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় এবং ২০১০ সাল থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে।
১৯৬৮ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয় এবং এর নাম খানিকটা পরিবর্তিত হয়ে আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে সকল প্রকার নথিপত্রে ব্যবহৃত হতে থাকে। বিদ্যালয় সরকারিকরণের সময় এর গুণগত মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তৎকালীন প্রধান শিক্ষিকা জনাব সিরিয়া খাতুন। ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে মৌলভীবাজার পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান জনাব যতীন্দ্র মোহন দেব এবং শিক্ষানুরাগী এডভোকেট মধুসূদন দত্ত স্কুলের নামে ১২৩ শতক ভূমি দান করেন। তখন এ ভূমির উপর ছাত্রীনিবাস, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন, হোস্টেল সুপারের বাসভবন এবং দারোয়ানের বাসভবন নির্মিত হয়। এদিকে, পাকিস্তান আমলে নির্মিত বিদ্যালয়ের পুরাতন ক্যাম্পাসের টিনশেড ভবনসমূহ কালক্রমে জরাজীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে ১৯৮০ সালে বিদ্যালয়ের সমস্ত কার্যক্রম বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন জনাব ঊষা দাস। এ ক্যাম্পাসে প্রথমে সাবেক ছাত্রীনিবাসে শ্রেণির কাজ চলত। ধীরে ধীরে বর্তমান ক্যাম্পাসের অন্য ভবনসমূহ নির্মিত হয়। ১৯৮৪ সালে মৌলভীবাজার শহরে এক ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। মনু নদীর প্রলয়ংকরী এ বন্যায় বিদ্যালয়ের বহু মূল্যবান কাগজপত্র এবং স্কুল লাইব্রেরির মূল্যবান বইপত্র বিনষ্ট হয়। স্কুলের যাবতীয় কার্যক্রম বর্তমানে নতুন ক্যাম্পাস তথা এডভোকেট যতীন্দ্র মোহন দেব এবং এডভোকেট মধুসূদন দত্ত কর্তৃক দানকৃত ১২৩ শতক ভূমির উপর চলছে। পড়াশুনার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে। বহু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়টি ২০০১ সালে এবং ২০০৪ সালে জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
২০১৩ সাল
শ্রেনী | শিক্ষার্থী সংখ্যা |
৬ষ্ঠ | ২৫৭
|
৭ম | ২৫৮ |
৮ম | ২৫৭ |
৯ম | ২৩২ |
১০ম | ১৮৬
|
মোট শিক্ষার্থী | ১১৯০ |
জে এস সি তথ্যদি
বছর | মোট পরীক্ষার্থী | A+ | A | A- | B | C | D | মোট পাশ | পাশের হার |
২০১০ | ১৫৯ | ০১ | ৪৩ | ৩২ | ৩৫ | ৪৪ | - | ১৫৫ | ৯৭.৪৮% |
২০১১ | ১৬৯ | ১৫ | ৬৯ | ৪২ | ২২ | ২১ | - | ১৬৯ | ১০০% |
২০১২ | ২২৩ | ১৮ | ১০৩ | ৫০ | ৩৪ | ১৫ | - | ২২০ | ৯৮.৬৫% |
২০১৩ খ্রীঃ এস এস সি
বিভাগ | পরিক্ষার্থী | A+ | A | A- | B | C | D | মোট পাশ | পাশের হার |
বিজ্ঞান | ৭৩ | ২০ | ৪৪ | ০৪ | - | - | - | ৬৮ | ৯৬.৩৪% |
মানবিক | ১৬ | - | ০৮ | ০৩ | ০৪ | ০২ | - | ১৬ | |
ব্যবসায় শিক্ষা | ১০২ | ৫৩ | ৫৩ | ২৮ | ০৫ | ০২ | - | ১০০ |
২০১২ খ্রীঃ এস এস সি
বিভাগ | পরিক্ষার্থী | A+ | A | A- | B | C | D | মোট পাশ | পাশের হার |
বিজ্ঞান | ৫৬ | ২১ | ৩২ | ০৪ | - | - | - | ৫৬ | ৯৮.৭৫% |
মানবিক | ২৫ | - | ০৭ | ০৮ | ০৭ | ০১ | - | ২৩ | |
ব্যবসায় শিক্ষা | ৮০ | ১০ | ৪২ | ১৬ | ১০ | ০২ | - | ৮০ |
২০১১ খ্রীঃ এস এস সি
বিভাগ | পরিক্ষার্থী | A+ | A | A- | B | C | D | মোট পাশ | পাশের হার |
বিজ্ঞান | ৬২ | ৩১ | ২৫ | ০৪ | - | - | - | ৬০ | ৯৮.৫৬% |
মানবিক | ৩১ | ০১ | ১৭ | ০৬ | ০৫ | ০২ | - | ৩১ | |
ব্যবসায় শিক্ষা | ৫৫ | ০৮ | ৩৮ | ০৯ | - | - | - | ৫৫ |
২০১০খ্রীঃ এস এস সি
বিভাগ | পরিক্ষার্থী | A+ | A | A- | B | C | D | মোট পাশ | পাশের হার |
বিজ্ঞান | ৫৯ | ২৪ | ৩১ | ০১ | ০১ | - | - | ৫৭ | ৯৬.৪৯% |
মানবিক | ৪১ | ০৩ | ১১ | ১৫ | ০৩ | ০৫ | - | ৩৭ | |
ব্যবসায় শিক্ষা | ৭১ | ১৩ | ৪৩ | ১২ | ০২ | ০১ | - | ৭১ |
২০০৯খ্রীঃ এস এস সি
বিভাগ | পরিক্ষার্থী | A+ | A | A- | B | C | D | মোট পাশ | পাশের হার |
বিজ্ঞান | ৩৫ | ১৭ | ১৪ | ০২ | ০২ | - | - | ৩৫ | ৯৩.৬২% |
মানবিক | ৫০ | ০১ | ১৪ | ০৭ | ১০ | ১০ | ০১ | ৪৩ | |
ব্যবসায় শিক্ষা | ৫৬ | ০৩ | ২৬ | ১৬ | ০৮ | ০১ | - | ৫৪ |
ঠিকানা : শান্তিবাগ, চৌমুহনা, মৌলভীবাজার।
টেলিফোন : ০৮৬১-৫২৪৮৮
ইমেইল : aliamzad_ghs@yahoo.com
ওয়েব সাইট: www.aagghs.edu.bd
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস